নিজস্ব প্রতিবেদক: একজন মায়ের মৃত্যু মানে শুধু একটি পরিবারের ক্ষতি নয়—তা এক সভ্যতার নিঃশব্দ কান্না। তেমনি এক অন্ধকার সকাল নিয়ে এসেছে রোববার, যেদিন পরপারে পাড়ি জমালেন অধ্যাপক মাহমুদা বেগম (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক, আদর্শনিষ্ঠ এক শিক্ষাব্রতী, যিনি হাজারো মানুষকে আলোকিত করেছেন জ্ঞানের আলোয়। আর ছিলেন ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক, নির্ভীক সত্যযোদ্ধা ড. মাহমুদুর রহমানের প্রিয়তমা মা।
এই মহীয়সী নারীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী।
শোকবার্তায় তিনি শুধু একটি প্রথাগত দুঃখপ্রকাশ নয়, বরং তুলে ধরেছেন এক হৃদয়ছোঁয়া সম্পর্কের কথা—একজন অসাধারণ নারীর মমতা, যিনি হাসপাতালে পাশের কেবিনে থেকেও হয়ে উঠেছিলেন তার কাছে “মা”।
আযমী লিখেছেন, “জুলাই বিপ্লবের পর ৮ বছরের বন্দিজীবন শেষে আমি যখন হাসপাতালে, তিনিও তখন সেখানে। প্রতিদিনই যেতাম তাঁর কেবিনে। আমাকে দেখলেই বলতেন, ‘তুমি একা নও, আমি পাশে আছি।’ অচেনা এক মানুষ কীভাবে এতটা আপন হয়ে যেতে পারেন—উনার মাঝে ছিল সেই মানবিক জাদু। স্নেহময়ী মাতার মতো আমার দুঃখ ভাগ করে নিতেন, আমার কষ্টে চোখ ভিজিয়ে বলতেন—‘মনোবল হারিয়ো না’। এ পৃথিবীতে এমন হৃদয়ের মানুষ খুব কম দেখা যায়।”
একজন শিক্ষক কেবল পেশাজীবী নন, জাতি গঠনের কারিগর। মাহমুদা বেগম সেই দায়িত্ব পালন করেছেন জীবনভর নিষ্ঠার সঙ্গে। আযমীর ভাষায়, “তিনি ছিলেন এক আলোকবর্তিকা, যিনি শুধু শিক্ষাদানই করেননি, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছেন বিবেক, আদর্শ ও দেশপ্রেম। সমাজের সামনে রেখে গেছেন এক অনন্য উদাহরণ।”
মায়ের মৃত্যুতে সন্তানের শোক ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। ড. মাহমুদুর রহমান নিয়মিত মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতেন—এটিও উঠে এসেছে আযমীর কথায়, “স্যার যখন হাসপাতালে মায়ের পাশে আসতেন, তখন আমার সঙ্গেও দেখা হতো। আমি দেখেছি, কী মমতায় তিনি মায়ের হাত ধরতেন, কী গভীর শ্রদ্ধায় কথা বলতেন। সেই দৃশ্য আমাকে মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও ভালোবাসার নতুন সংজ্ঞা শিখিয়েছে।”
শেষে তিনি বলেন, “মাহমুদা বেগম শুধু একজন মা ছিলেন না, ছিলেন জাতির জন্য এক আদর্শ মাতা। আমি দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দেন। এই শোক বইবার শক্তি পরিবারকে দান করুন। আর আমরা যেন তাঁর দেখানো পথে চলতে পারি—মানবতা, শিক্ষা ও দেশপ্রেমের দীপ্ত আলোয়।”
আজ, এই বিদায়ী প্রভাতে আমরা সবাই যেন একবাক্যে বলি—জাতি হারালো এক শিক্ষক, এক মা, এক প্রেরণাদায়ী আত্মা। তাঁর কর্মই হবে তাঁর চিরন্তন জীবনের সাক্ষ্য।
এম,আর,এ/
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
মাহমুদুর রহমানের মায়ের ইন্তেকালে ব্রিগেডিয়ার আযমীর শোক
- আপলোড সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ১০:৫৫:৫২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ১০:৫৫:৫২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ